অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে

4.5/5 - (13 votes)

বাংলাদেশে এখন অনলাইনে সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। সময় বাঁচাতে এবং ঝামেলা এড়াতে আপনি ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। নিচে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ধাপগুলো দেওয়া হলো:

বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল:বিস্তারিত নির্দেশিকা

আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • রিটার্ন দাখিলের সময়: বাংলাদেশে ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় নির্ধারিত হয়েছে ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
  • কর নির্দেশিকা: আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পূর্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর ওয়েবসাইট থেকে চলতি অর্থবছরের কর নির্দেশিকা অবশ্যই ভালোভাবে পড়ে নিন। এই নির্দেশিকায় আপনি আয়কর সংক্রান্ত সকল বিস্তারিত তথ্য পাবেন।

কেন আয়কর নির্দেশিকা পড়া জরুপী?

  • নিয়মকানুন সম্পর্কে সঠিক ধারণা: আয়কর নির্দেশিকায় আয়কর সংক্রান্ত সকল নিয়মকানুন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা থাকে। এটি আপনাকে সঠিকভাবে রিটার্ন পূরণ করতে সাহায্য করবে।
  • করযোগ্য আয় নির্ধারণ: কোন আয় করযোগ্য এবং কোনটি করমুক্ত, তা নির্ধারণ করতে কর নির্দেশিকা আপনাকে সহায়তা করবে।
  • ছাড় ও সুবিধা: আয়কর নির্দেশিকায় বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। এটি আপনাকে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।
  • দণ্ড এড়ানো: নির্দেশিকা না পড়ার কারণে ভুল তথ্য দাখিল করলে আপনাকে জরিমানা গুনতে হতে পারে।

কর নির্দেশিকায় সাধারণত কী ধরনের তথ্য থাকে?

  • আয়করের হার: বিভিন্ন ধরনের আয়ের জন্য কত হারে কর দিতে হবে।
  • করযোগ্য আয়: কোন কোন আয় করযোগ্য।
  • করমুক্ত আয়: কোন কোন আয় করমুক্ত।
  • ছাড় ও সুবিধা: বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও সুবিধা।
  • রিটার্ন ফরম পূরণের নির্দেশাবলী: রিটার্ন ফরমটি কীভাবে পূরণ করতে হয়।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কোন কোন কাগজপত্র প্রয়োজন।
  • দাখিলের পদ্ধতি: অনলাইনে বা অফলাইনে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

কীভাবে কর নির্দেশিকা পাবেন?

  • এনবিআরের ওয়েবসাইট: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি চলতি অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকা ডাউনলোড করতে পারবেন।
  • আয়কর অফিস: আপনার নিকটস্থ আয়কর অফিস থেকেও আয়কর নির্দেশিকা সংগ্রহ করতে পারবেন।

কারা আয়কর দিতে বাধ্য

এনবিআরের নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্নলিখিত আয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আয়কর দিতে হবে:

  1. সাধারণ নাগরিকদের জন্য:
    • বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে আয়কর প্রযোজ্য।
  2. নারী ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য (৬৫ বছরের বেশি):
    • করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা
  3. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য:
    • করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা

অন্য যেসব ক্ষেত্রে আয়কর প্রযোজ্য

নির্দিষ্ট কিছু আর্থিক এবং পেশাগত কার্যক্রমের জন্যও আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক:

  • পূর্ববর্তী কর মূল্যায়ন থাকলে।
  • শহর এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা থাকলে।
  • গাড়ির মালিকানা থাকলে।
  • নির্দিষ্ট পেশার সদস্যপদ থাকলে (যেমন: ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী)।
  • ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে
  • সরকারি দরপত্র বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আয়কর দিতে হবে।

এছাড়া, নিবন্ধিত কোম্পানি ও এনজিওগুলোর জন্যও আয়কর জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আর মনে রাখবেন, করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর (TIN) থাকলে, আপনার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক, আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। যদি করযোগ্য আয় না থাকে, তবে শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। রিটার্ন জমা না দিলে আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  1. ইনকাম ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN): নতুন বা পুরাতন TIN নম্বর
  2. ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্যালারি স্লিপ, বিনিয়োগের কাগজপত্র ইত্যাদি
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  4. মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি

ধাপ ১: নিবন্ধন বা লগইন

  • অনলাইন পোর্টালে প্রবেশ করুন: eReturn পোর্টাল
  • নতুন অ্যাকাউন্ট খুলুন : যদি আপনার অ্যাকাউন্ট না থাকে।
  • TIN নম্বর, মোবাইল ও ইমেইল যাচাইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।
  • আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।

ধাপ ২: প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করুন

  • ব্যক্তিগত তথ্য: আপনার পেশা, আয়, ব্যয় এবং সম্পত্তির বিবরণ।
  • আয় ও ব্যয়ের বিবরণ: আপনার বার্ষিক আয়, বোনাস, ব্যাংক সুদ, এবং বিনিয়োগ থেকে আয়।
  • ট্যাক্স রিবেট বা ছাড়ের জন্য বিনিয়োগের তথ্য (যেমন: জীবন বীমা বা সঞ্চয়পত্র)।

ধাপ ৩: রিটার্ন ফর্ম পূরণ করুন

  1. রিটার্ন ফরম নির্বাচন করুন: আপনার পেশা ও আয় অনুযায়ী ফর্ম নির্বাচন করুন (ধরা যাক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ইত্যাদি)।
  2. ফরম পূরণ করুন: সব আয় ও করযোগ্য আয়ের উৎসের তথ্য দিন।
  3. স্বয়ংক্রিয় হিসাব পদ্ধতি: সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের পরিমাণ গণনা করবে।

ধাপ ৪: নথি সংযুক্তি

  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • যেমন: ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্যালারি স্লিপ, বিনিয়োগের প্রমাণ।

ধাপ ৫: রিটার্ন দাখিল এবং রসিদ সংগ্রহ

  1. সব তথ্য যাচাই করে সাবমিট করুন
  2. সফলভাবে জমা দিলে একটি রসিদ বা অ্যাকনোলেজমেন্ট স্লিপ পাবেন। এটি সংরক্ষণ করুন।

ধাপ ৬: প্রয়োজনে সংশোধন

  • রিটার্ন জমা দেওয়ার পর কোনো ভুল থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন করতে পারবেন।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর
  • সময়মতো জমা না দিলে জরিমানা হতে পারে।
  • কোনো করযোগ্য আয় না থাকলেও জিরো রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজেই আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

রিটার্ন দাখিলের সময় কি কি সমস্যা হতে পারে?

রিটার্ন দাখিলের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এগুলো সাধারণত ব্যক্তিগত তথ্যের ভুল, আয়ের হিসাবের জটিলতা, আইন পরিবর্তন, এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়।

রিটার্ন দাখিলের সময় যেসব সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:

  • তথ্যের ভুল:
    • ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, TIN নম্বর) ভুল হওয়া।
    • আয়ের উৎস, পরিমাণ বা তারিখ সম্পর্কিত ভুল তথ্য দেওয়া।
    • বিনিয়োগ, ব্যয় বা অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের তথ্য ভুলভাবে প্রদান করা।
  • আয়ের হিসাবের জটিলতা:
    • বিভিন্ন উৎস থেকে আয়ের যোগফল করতে সমস্যা হওয়া।
    • কর ছাড়, ক্রেডিট বা অন্যান্য হিসাবের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়া।
    • ব্যবসায়িক আয়ের ক্ষেত্রে খরচ, মুনাফা এবং হিসাব রক্ষার বিষয়ে জটিলতা।
  • আইন পরিবর্তন:
    • কর আইন পরিবর্তনের কারণে রিটার্ন দাখিলের নিয়ম বদলে যাওয়া।
    • নতুন আইন বা বিধিমালা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা।
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা:
    • অনলাইন রিটার্ন দাখিলের সময় ওয়েবসাইটে সমস্যা দেখা দেওয়া।
    • সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারের ত্রুটির কারণে রিটার্ন দাখিল করা যাচ্ছে না।
  • দলিলপত্রের অভাব:
    • আয়ের প্রমাণ, বিনিয়োগের প্রমাণ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র না থাকা।

এই সমস্যাগুলো এড়াতে আপনি কী করতে পারেন:

  • সঠিক তথ্য প্রদান: রিটার্ন দাখিলের সময় সব তথ্য সঠিকভাবে এবং সাবধানতার সাথে দিন।
  • আয়ের হিসাব সঠিকভাবে করুন: একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।
  • আইন পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকুন: কর বিষয়ক আপডেট নিয়মিত দেখুন।
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়তা নিন: হেল্পলাইন বা কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন।
  • প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সংগ্রহ করে রাখুন: সব দলিলপত্র এক জায়গায় রাখুন যাতে সহজে পাওয়া যায়।

রিটার্ন দাখিলের সময় সমস্যা হলে কী করবেন:

  • শান্ত থাকুন এবং বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করুন।
  • সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন।
  • সরকারি ওয়েবসাইট বা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।
  • একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
  • সময়মতো রিটার্ন দাখিল করার চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন: রিটার্ন দাখিলের সময় যে কোনো সমস্যা হলে দেরি না করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল: একটি সহজ গাইড

ঘরে বসে সহজেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন

আজকাল, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই পদ্ধতি আপনাকে সময় বাঁচাবে এবং আয়কর অফিসে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে।

আপনাকে কি কি প্রয়োজন হবে:

  • টিআইএন নাম্বার: আপনার করদাতা সনাক্তকরণ নাম্বার।
  • ইন্টারনেট সংযোগ: একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ।
  • কম্পিউটার বা মোবাইল: যেখানে আপনি অনলাইনে ফর্ম পূরণ করবেন।
  • আয়কর সংক্রান্ত সকল তথ্য: আয়ের উৎস, ব্যয়, বিনিয়োগ ইত্যাদির বিস্তারিত তথ্য।

ধাপে ধাপে নির্দেশাবলী:

  1. এনবিআরের ওয়েবসাইটে যান: আপনার দেশের আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে যান। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি হলো etaxnbr.gov.bd.
  2. লগইন করুন: আপনার টিআইএন নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। যদি আপনার পাসওয়ার্ড না থাকে, তাহলে পাসওয়ার্ড রিসেট করার অপশন ব্যবহার করুন।
  3. রিটার্ন ফর্ম পূরণ করুন: ওয়েবসাইটে আপনাকে একটি রিটার্ন ফর্ম দেওয়া হবে। এই ফর্মটিতে আপনার সকল আর্থিক তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  4. দলিল আপলোড করুন: যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনাকে কিছু দলিল আপলোড করতে হতে পারে।
  5. তদারকি করুন: ফর্মটি পূরণ শেষ হলে, একবার ভালো করে তদারকি করুন। কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন।
  6. সাবমিট করুন: সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ফর্মটি সাবমিট করুন।
  7. পেমেন্ট করুন: যদি আপনার কোনো ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়, তাহলে অনলাইনে পেমেন্ট করুন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • সময়সীমা: আয়কর রিটার্ন দাখিলের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। এই সময়সীমার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা জরুরি।
  • সহায়তা: যদি আপনি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে আয়কর বিভাগের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
  • সঠিক তথ্য: সবসময় সঠিক তথ্য দিন। ভুল তথ্য দিলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

ইউনিক বিজনেস আইডিয়া ২০২৫: Best business ideas of 2025

Leave a Comment