মোবাইল দেখার কারণেই বাড়ছে বাচ্চাদের ওবেসিটির হার: Best concern of 2025

Rate this post

আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”অল্পবয়সীদের মধ্যে স্থূলতার হার এতটাই বেড়েছে যে, তা বেশ উদ্বেগজনক। সারাদিনফোনে আসক্ত থাকার ফলে খেলাধুলার প্রতি অনীহাও বাড়ছে।”

মোবাইল

আজকালকার বাচ্চারা একবার হাতে ফোন পেলে আর কিছুই চাই না। সারাদিন কার্টুন দেখা, গেম খেলা—এসবই যেন তাদের নিত্যকার অভ্যাস। এমনকি অনেক বাবা-মাও ছোটবেলা থেকেই শিশুদের খাওয়ানো বা ব্যস্ত রাখার সময় ফোন হাতে ধরিয়ে দেন। এর ফলে, দিন দিন শিশুদের স্ক্রীন টাইম, অর্থাৎ ফোন দেখার সময়ও বেড়ে চলেছে। কিন্তু এই অভ্যাস কি আদৌ ভাল? গবেষণা বলছে, স্ক্রীন টাইম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতাও বাড়ছে। অল্পবয়সীদের মধ্যে স্থূলতার হার এতটাই বেশি যে, তা বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন ফোনে আসক্ত থাকার কারণে খেলাধুলার প্রতি অনীহাও দেখা দিচ্ছে।”

ওবেসিটি কি ?

ওবেসিটি বা স্থূলতা হলো শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার একটি অবস্থা। যখন কেউ তার আদর্শ ওজনের অনেক বেশি ওজন করে তখন তাকে স্থূল বলা হয়।

ওবেসিটি কেন হয়?

ওবেসিটির অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  • খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত ফল, সবজি ও পুরো শস্য না খাওয়া।
  • শারীরিক অক্রিয়তা: পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা।
  • জিনগত কারণ: কারো কারো জিনগত কারণে ওবেসিটি হতে পারে।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ ওবেসিটির কারণ হতে পারে।
  • হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি হরমোনজনিত সমস্যা ওবেসিটির কারণ হতে পারে।
  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপও ওবেসিটির একটি কারণ হতে পারে।

ওবেসিটির ক্ষতিকর প্রভাব

ওবেসিটি অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন:

  • হৃদরোগ: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি।
  • ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • উচ্চ রক্তচাপ: রক্তনালীর দেয়ালে চাপ বেড়ে যাওয়া।
  • কিডনি রোগ: কিডনি কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • ক্যান্সার: স্তন, কোলন, কিডনি ইত্যাদি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
  • যৌন সমস্যা: পুরুষ ও নারী উভয়ের যৌন সমস্যার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • সন্ধিবাত: জোড়ে ব্যথা ও প্রদাহ।
  • শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

মোবাইল  কি ?

মোবাইল হলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি একটি ছোট্ট যন্ত্র যার মাধ্যমে আমরা যে কোনো জায়গা থেকে যে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি। কেবল কথা বলার জন্যই নয়, ফোনের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু করতে পারি।

মোবাইল কিভাবে কাজ করে?

এটি বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে অন্য ফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এই তরঙ্গগুলো মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ফোনের ভিতরে একটি ছোট্ট কম্পিউটার থাকে যা এই তরঙ্গগুলোকে বোঝে এবং প্রক্রিয়া করে।

মোবাইল

মোবাইলের ব্যবহার:

  • যোগাযোগ: ফোনের প্রাথমিক কাজ হলো কথা বলা। এছাড়াও এটির মাধ্যমে ম্যাসেজ, ইমেইল, ভিডিও কল করা যায়।
  • ইন্টারনেট: বেশিরভাগ ফোনেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা খবর পড়তে পারি, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারি, অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারি এবং আরো অনেক কিছু করতে পারি।
  • এপস: এটিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ইনস্টল করে আমরা আমাদের কাজ আরও সহজ করে নিতে পারি। যেমন, মানচিত্র দেখা, গান শোনা, বই পড়া ইত্যাদি।
  • ক্যামেরা: বেশিরভাগ ফোনেই ক্যামেরা থাকে। এই ক্যামেরা দিয়ে আমরা ছবি তুলতে এবং ভিডিও রেকর্ড করতে পারি।
  • অন্যান্য: এটি দিয়ে আমরা ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারি, গেম খেলতে পারি এবং আরো অনেক কিছু করতে পারি।

মোবাইলের ধরন:

  • ফিচার ফোন: এই ধরনের ফোনে কেবল কথা বলা এবং ম্যাসেজ করার সুবিধা থাকে।
  • স্মার্টফোন: এই ধরনের ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ইনস্টল করা যায়।

মোবাইলের সুবিধা:

  • যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে যোগাযোগ করা যায়।
  • তথ্য খুঁজে পাওয়া সহজ।
  • বিনোদন।
  • কাজের ক্ষেত্রে সহায়তা।

মোবাইলের অসুবিধা:

  • মোবাইল আসক্তি।
  • স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি।

মোবাইল ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা:

  • এটি ব্যবহারের সময় চোখ থেকে কিছুটা দূরে রাখা উচিত।
  • ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • অজানা নম্বর থেকে আসা কল রিসিভ করা উচিত নয়।

মোবাইল ব্যবহার ও ওবেসিটির মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে?

আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই সুবিধাজনক যন্ত্রটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নানা ধরনের প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হলো ওবেসিটি বা মাত্রাতিরিক্ত মেদবহুলতা।

  • শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়া: ফোনে আসক্ত হয়ে আমরা অনেক সময় বাইরে গিয়ে খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রম করা বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকি। ফলে শরীরের ক্যালরি খরচ কমে যায় এবং মেদ জমার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • খাবারের পরিমাণ বাড়া: ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে বা গেম খেলতে খেলতে আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলি। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফুড ডেলিভারি অ্যাপস আমাদের খাবার খাওয়ার অভ্যাসকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে।
  • নিরাপদ খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া: ফোনে বিভিন্ন ধরনের খাবারের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হই।
  • ঘুমের ব্যাঘাত: এটি ব্যবহার ঘুমের চক্রকে বিঘ্নিত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে হরমোনগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • চাপ বাড়া: সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনা এবং অনলাইন বিতর্ক আমাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। চাপের কারণে অনেকেই খাবারকে সান্ত্বনা হিসেবে গ্রহণ করে, যার ফলে ওজন বাড়তে পারে।

মোবাইল ব্যবহার ও ওবেসিটির সম্পর্ক কমাতে কী করবেন?

মোবাইল ব্যবহার ও ওবেসিটির মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শারীরিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে দেয়, খাবারের প্রতি মনোযোগ কমায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

ফোনের ব্যবহার ও ওবেসিটির সম্পর্ক কমাতে আপনি নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেন:

  • স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন: নির্দিষ্ট সময়ের পর ফোনের ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
  • শারীরিক কর্মকাণ্ড বাড়ান: এটি ব্যবহারের পরিবর্তে হাঁটা, দৌড়ানো, ব্যায়াম করা ইত্যাদি করুন।
  • খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: খাওয়ার সময় ফোনের ব্যবহার না করে খাবারের স্বাদ উপভোগ করুন এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • ঘুমের মান উন্নত করুন: ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
  • অ্যাপস ব্যবহার করে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন: বিভিন্ন অ্যাপসের সাহায্যে আপনি মোবাইল ব্যবহারের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
  • সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিন: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, বই পড়া, হবি গড়ে তোলা ইত্যাদি করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান: ফল, সবজি, পানি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খান।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি আপনার ওজন বৃদ্ধির সমস্যা অনেক বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মনে রাখবেন:

  • এটি ব্যবহারকে সম্পূর্ণ বন্ধ করা অবাস্তব হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তুললে মোবাইল ব্যবহারের কারণে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা কমবে।
  • ধৈর্য ধরুন এবং নিজেকে উৎসাহিত করুন।

বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব

আধুনিক যুগে ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু শিশুদের হাতে এটি দেওয়া কতটা নিরাপদ? আসুন জেনে নিই মোবাইল ব্যবহারের কারণে শিশুদের যেসব ক্ষতি হতে পারে:

শারীরিক ক্ষতি:

  • দৃষ্টিশক্তির অবনতি: মোবাইলের ছোট পর্দায় ঘন ঘন তাকিয়ে থাকার ফলে শিশুদের চোখের পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
  • মেরুদণ্ডের সমস্যা: দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে এটি ব্যবহার করার ফলে মেরুদণ্ডে বক্রতা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
  • শ্রবণশক্তির ক্ষতি: হেডফোন ব্যবহার করে এটিতে গান বা ভিডিও দেখার ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • নিদ্রাহীনতা: এটির আলো এবং নোটিফিকেশন শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং নিদ্রাহীনতার সমস্যা সৃষ্টি করে।

মানসিক ক্ষতি:

  • একাকিত্ব: এটিতে ব্যস্ত থাকার ফলে শিশুরা বাস্তব জীবনের সঙ্গীদের সঙ্গে সময় কাটাতে কম সময় দেয় এবং একাকিত্ববোধ করে।
  • আক্রমণাত্মকতা: ভিডিও গেম এবং অন্যান্য অনলাইন কনটেন্টে থাকা হিংস্র দৃশ্য শিশুদের মনে আক্রমণাত্মকতা বাড়াতে পারে।
  • মনোযোগ কমে যাওয়া: এটির বিভিন্ন অ্যাপ এবং নোটিফিকেশন শিশুদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে বাধা দেয় এবং মনোযোগ কমে যায়।
  • চিন্তা ও উদ্বেগ: সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন বুলিং শিশুদের মধ্যে চিন্তা ও উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
  • শিক্ষায় মনোযোগ কমে যাওয়া: এটিতে ব্যস্ত থাকার ফলে শিশুরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না এবং ফলে একাডেমিক ফলাফল খারাপ হতে পারে।

সামাজিক ক্ষতি:

  • সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়া: এটিতে ব্যস্ত থাকার ফলে শিশুরা বাস্তব জীবনের মানুষের সাথে যোগাযোগ কম করে এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায় না।
  • পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি: এটিতে ব্যস্ত থাকার ফলে শিশুরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে কম সময় দেয় এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়।

বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: কার্যকর কিছু উপায়

আজকের ডিজিটাল যুগে বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতি করতে পারে। তাই বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।

কিছু কার্যকর উপায়:

  • নিজের উদাহরণ দেখান: বাচ্চারা আপনাকে অনুকরণ করে। তাই নিজে যতটা সম্ভব এটি ব্যবহার কমান। বই পড়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বাড়ির কাজে সাহায্য করা ইত্যাদির মতো অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
  • সময় নির্ধারণ করুন: বাচ্চারা কতক্ষণ ফোন ব্যবহার করবে, তা আগেই ঠিক করে দিন। এবং সেই সময় মেনে চলার জন্য তাকে উৎসাহিত করুন।
  • মোবাইল ফ্রি জোন তৈরি করুন: খাবার টেবিল, ঘুমের সময়, বাড়ির বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সময় ইত্যাদি সময় মোবাইল ফ্রি রাখুন।
  • সক্রিয় কার্যকলাপে উৎসাহিত করুন: বাচ্চাকে বই পড়া, খেলাধুলা করা, গান শোনা, ছবি আঁকা ইত্যাদি সক্রিয় কার্যকলাপে উৎসাহিত করুন।
  • মোবাইলের পরিবর্তে অন্য বিনোদন: ফোনের পরিবর্তে অন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। যেমন, বোর্ড গেম খেলা, বাইরে বেড়াতে যাওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি।
  • পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান: পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে বাচ্চা ফোনের দিকে কম আকৃষ্ট হবে।
  • মোবাইলে উপযুক্ত কন্টেন্ট: বাচ্চা যেন শুধু উপযুক্ত কন্টেন্ট দেখতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনি মোবাইলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করতে পারেন।
  • বয়স অনুযায়ী মোবাইল: বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ফোন দেওয়া উচিত। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন দেওয়ার পরিবর্তে সহজ ধরনের ফোন দেওয়া ভাল।
  • মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম তৈরি করুন: ফোনের ব্যবহারের কিছু নিয়ম তৈরি করুন এবং সেই নিয়ম মেনে চলার জন্য বাচ্চাকে বোঝান।

মনে রাখবেন:

  • বাচ্চাকে ধমক দেওয়ার পরিবর্তে বুঝিয়ে বলুন।
  • বাচ্চার সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারা করুন।
  • বাচ্চাকে নিজের মতামত দেওয়ার সুযোগ দিন।
  • ধৈর্য ধরুন। ফলাফল পেতে সময় লাগতে পারে।

আরও কিছু টিপস:

  • শিশুদের জন্য বিশেষ অ্যাপস: বাজারে শিশুদের জন্য বিশেষ অ্যাপস পাওয়া যায়, যা শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক উভয় ধরনের কন্টেন্ট প্রদান করে।
  • স্ক্রিন টাইম: অনেক স্মার্টফোনে স্ক্রিন টাইম সীমা নির্ধারণের অপশন থাকে। এটি ব্যবহার করে আপনি বাচ্চার মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
  • প্যারেন্টাল কন্ট্রোল: অনেক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অপশন থাকে। এটি ব্যবহার করে আপনি বাচ্চার জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট নির্বাচন করতে পারেন।

মোবাইল থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, কিন্তু গবেষণা বলছে দীর্ঘ সময় মোবাইল দেখার নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। আপনি দিনে কতক্ষণ ফোনের সামনে সময় কাটাচ্ছেন, তা আপনার কাজের দক্ষতা, আবেগের অনুভূতি, এমনকি পড়াশোনাকেও প্রভাবিত করে। শিশুর ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত শিশুরা তাদের মাতৃভাষা শেখে বড়দের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সারাদিন ফোনে ডুবে থাকলে এই বিকাশ ব্যাহত হয়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব বাবা-মায়েরা দীর্ঘ সময় টিভি বা মোবাইলের সামনে কাটান, তাদের সন্তানরাও একই অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলস্বরূপ স্থূলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের মতো সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে।

সমীক্ষা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত তিন দশকে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার হার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে, যা বর্তমানে ১৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিভির সামনে অনেকক্ষণ বসে থাকা শিশুদের অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হলো সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা এবং স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।”

মনে রাখবেন, প্রযুক্তি জীবনের একটি অংশ। কিন্তু এটি আমাদের জীবনের অন্য সব দিককে ছাপিয়ে যেতে দেওয়া উচিত নয়।

Leave a Comment